প্যারিসের রাস্তায় কোন অনিবন্ধিত আফগান অভিবাসীর সঙ্গে দেখা হলেই তিনি তার অতীতে ফিরে যান৷ আফগানিস্তানে জন্ম, পরবর্তীতে ইরানে কঠিন নির্বাসন কাটিয়ে ২০০৯ সালে অভিভাবকহীন হিসেবে তিনি ফ্রান্সে এসেছিলেন৷
২৫ বছর বয়সী এই ফরাসি দুই বছর বয়সী কন্যা সন্তানের জনক৷ আফগান শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন এখন৷ ফ্রান্সে আসার পর তাকে যেভাবে সহযোগিতা করা হয়েছিল সেটিই তার আজকের উত্থানের পেছনে প্রধান কারণ বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘যখন আমি এখানে পৌঁছাই আমাকে চমৎকার সঙ্গ দেয়া হয়েছিল, হাতে ধরে শেখানো হয়েছিল,’’ বলেন রেজা জাফারি৷
নিজে উন্নত পরিবেশ আর জীবনের সান্নিধ্য পেলেও নিজ দেশের আফগান তরুণদের প্যারিসের রাস্তায় অসহায়ভাবে দেখাটা তার জন্য বেদনার। আফগান অভিবাসীদের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়নে তিনি নিবিড়ভাবে তাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্যারিসের রিপাবলিক চত্ত্বরের আন্দোলন, বাসস্থানের জন্য আন্দোলন, অনিবন্ধিত ও নতুন আসা অভিবাসীদের মধ্যে খাবার বিতরণ, প্রশাসনিক কাজে সহায়তাসহ বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের মুখপাত্র হয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে তার সাথে পরিবেশবাদী রাজনৈতিক দল ‘ইউরোপ ইকোলজি লেভেয়ার’ (ইইএলভি) -এর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাত হয়৷ এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিসের ১৬তম ডিস্ট্রিক্টে বাসস্থানের দাবিতে একটি স্কুল দখলের আন্দোলনের পর তার সাথে ইইএলভি দলের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের ইল দ্য ফ্রঁস আঞ্চলিক নির্বাচনে পরিবেশবাদীদের প্রধান জুলিয়ে বায়ো।
জুলিয়ে বায়োর নির্বাচনী প্রচারের প্রধান সমন্বয়কারী লেয়া বালাজ বলেন, ‘‘আমরা তার সাথে সার্বিক কর্মকাণ্ড, ফ্রান্সের অভিবাসন নীতি, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। রেজা অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারেন রাজনীতি ও জনপ্রসাশনের বিভিন্ন পদক্ষেপ তার কর্মকাণ্ডে বেশ প্রভাব ফেলছে। বৈঠকে তার কাছ থেকে এসব ধারণা পাওয়ার পরে আমরা চিন্তা করি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় ৷’’
আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য বিশেষ অভ্যর্থনা কেন্দ্র
রেজা জাফারি বলেন, ‘‘আমি জুলিয়েন বায়োর সাথে দেখা করার পরে, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইইএলভি ইল-দ্য-ফ্রঁস আঞ্চলিক নির্বাচনে জয়ী হলে আমাদের কাছে আপনি কী প্রত্যাশা করেন? এর উত্তরে আমি যে বিষয়টি প্রথমে চেয়েছিলাম সেটি হল আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য একটি বিশেষ অভ্যর্থনা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা৷ যেখানে এই অঞ্চলে আগত সমস্ত অভিবাসী প্রথমে এসে আশ্রয়গ্রহণ করতে পারবেন৷ আমার কাছে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রাস্তায় থাকা অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরগুলো অবসানে এর কোন বিকল্প নেই৷’’ তিনি আরো বলেন, সফলভাবে এ সমস্যার সমাধানে একটি পরিপূর্ণ অভ্যর্থনা কেন্দ্র খুব গুরুত্বপূর্ণ৷
‘‘আমরা সমাজ কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম কারণ উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ইল দ্য ফ্রঁসে অভিবাসন সমস্যার একটি সুন্দর সমাধান হতে পারে৷’’ তার মতে, অনেক সময়ই অভিবাসীদের বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং সামাজিক কাজে যেসব সমাজকর্মীরা সাহায্য করেন তারা অভিবাসন এবং সংশ্লিষ্ট পদ্ধতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না৷ যার কারণে অনেক অভিবাসী নানা ভোগান্তির শিকার হন৷
নিজে যেহেতু অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে এসেছেন তাই তাদের অধিকার নিয়েও সোচ্চার জাফারি৷ কারণ তরুণরা আসার পরে সঠিক যত্ন না পেলে পরবর্তীতে তারা সমাজের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে৷ যেটি একই সাথে নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য খারাপ৷
‘‘নির্বাচনে জিতে কাউন্সিলর হওয়া আমার লক্ষ্য না’’
সামনের আঞ্চলিক নির্বাচনে ইল দ্য ফ্রঁস বিভাগে ইইএলভি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসবে কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে জুন পর্যন্ত৷ তবে রেজা জাফারি বলেন, কোনভাবে নির্বাচনে জিতে কাউন্সিলর হওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি না জিতলেও ইইএলভি অভিবাসন বিষয়ে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অবশ্যই মেনে চলব৷ মূলত এই কারনে আমি নির্বাচন এবং ইইএলভির হয়ে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ ঘোষিত ইইএলভি প্রার্থী তালিকায় কাউন্সিলর হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন রেজা জাফারি৷ অবশ্য দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে বাম, সোশ্যালিস্ট ও পরিবেশবাদীদের সমন্বিত প্রার্থী তালিকা হলে সেক্ষেত্রে তিনি তালিকায় পেছনে চলে যেতে পারেন৷
ইপসোস সোপরা, ফ্রান্স টেলিভিশন এবং রেডিও ফ্রান্স স্টেরিয়ার একটি যৌথ জরিপে ইল দ্য ফ্রঁস বিভাগের দায়িত্বে থাকা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভালেরি প্রেকের্স ৩২% ভোট পেতে পারেন৷ ১৩% সম্ভাব্য ভোটে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ইইএলভি প্রার্থী জুলিয়ে বায়ো।
সুত্র :ইনফোমাইগ্রেন্টস